একাত্তরের চেতনাকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগ দেশের স্বনামধন্য আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
একাত্তরের চেতনাকে পুঁজি করে আওয়ামীলীগ দেশের স্বনামধন্য আলেমদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, একাত্তরের চেতনাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ শত শত মায়ের কোল খালি করেছে, শত শত সন্তানকে এতিম করেছে, শত শত মাকে সন্তান হারা করেছে। যারা একাত্তরকে আওয়ামীকরণ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে বলে হুশিয়ারি করেন।
আন্তর্জাতিক মানবিধাকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত গণজমায়েতে এই দাবি করেন হাসনাত।
তিনি বলেন, একাত্তর সালকে পুঁজি করে যাদের ইজ্জত লুন্ঠন করা হয়েছে, যাদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে, যেই পরিবার গুলোকে মানুষের সামনে অপদস্ত করা হয়েছে সেই পরিবারগুলোর ইজ্জত ফিরিয়ে দিতে হবে।
প্রশ্নবিদ্ধ এক বিচারের মাধ্যমে আমাদের দেশের আলেমগুলোকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। আমরা এই বিচার নিশ্চত না করা পর্যন্ত দুনিয়ার কোন শক্তি নাই আমাদের রাজপথ থেকে উৎখাত করবে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা জেল থেকে বের হয়, মনে হয় শ্বশুর বাড়িতে পিকনিক করতে এসেছে। আমরা খবর পেয়েছি, ক্যান্টনমেন্ট গুলোতে, জেল খানাগুলোতে নাকি রাতের বেলায় ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়।
প্রশাসন পুলিশ প্রত্যেকটা স্তরে স্তরে ফ্যাসিজমের আখড়া গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি জায়গা থেকে এই ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে হবে।
আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে সেটি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে দাবি করে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ক্ষমতার লোভে অনেক রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে মাফ করে দেওয়ার আলাপ তুলেছে। আমরা বলতে চাই, মন্ত্রিত্বের লোভে, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভে, সংসদে যাওয়ার লোভে, আপনারা যদি মনে করেন… এই আহতরা রাস্তায় রক্ত দিয়েছে, এই পিচ্ছিল রক্তের উপর দিয়ে আপনি ক্ষমতায় যাবেন তাহলে মনে রাখবেন, আপনি জতীয় বেইমান হিসেবে পরিচিত হবেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরে এই নেতা বলেন, “শহীদের রক্ত শুকানোর আগে অনেক মুরুব্বি আওয়ামী লীগকে ক্ষমার কথা বলছেন, নির্বাচনে আনার কথা বলছেন। আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতের আগে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে সেটি শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।
তিনি বলেন, যে দল (আওয়ামীলীগ) এখনও পর্যন্ত একটা সরিও বলে নাই, এখনও পর্যন্ত অপরাধ স্বীকার করে নাই, তাদের সাথে কিসের রিকনসিলিয়েশন? তারা ক্ষমা চাওয়ার আগে- তারা ক্ষমা চাওয়া তো দূরে থাক তারা বিদেশে বসে হত্যার হুমকি দিচ্ছে- আমরা দেখছি মুরব্বিদের মধ্যে তাদের জন্য মায়া হচ্ছে। যারা এই রিকনসিলিয়েশনের আলাপ তুলছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে দেখতে চাচ্ছেন আপনারা ক্ষমতামুখি আর আমরা আহত, আমরা জনতামুখি।
এদেশে যতদিন পর্যন্ত না আওয়ামীলীগের বিচার নিশ্চিত হবে, ততদিন পর্যন্ত, আওয়ামীলীগের বিচার নিশ্চিতের পূর্বে আওয়ামীলীগকে রাজনীতির ময়দানে ফিরিয়ে আনতে চান, তাহলে এই আহতদের রক্তের উপর পাড়া দিয়ে তাদেরকে মাঠে আনতে হবে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ভারতের সাথে কোন গোলাম-মুনিবের সম্পর্ক আর হবে না। ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে ন্যায্যতার মার্যাদাপূর্ণ প্রতিবেশীর ভিত্তিতে। ভারত এখন জঙ্গিদের আশ্রয় দিচ্ছে এবং ‘গুজরাট কসাই’ আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাজেশন দিচ্ছে।
আমরা ‘গুজরাট কশাই মুদিকে বলতে চাই, আমার ভাই আবু আলিফকে পঙ্গু করে রাস্তায় জবাই করা হয়েছে। জবাই করার পরেও আমাদের দেশের আলেম সমাজ, আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি।
ভারতের কোন ষড়যন্ত্রে পা না দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ভারত চেয়েছিল আমাদের যারা সংখ্যালঘু আছে তাদের সাথে আমরা সংঘর্ষে জড়াই। নতুন বাংলাদেশে কোম সংখ্যালঘু নাই। আমার কোন হিন্দু ভাই, বৌদ্ধ ভাই কিংবা অপরাপর ধর্মীয় জনগোষ্ঠী সংখ্যালঘু না, বাংলাদেশের বিপক্ষে যারা, তারাই হচ্ছে সংখ্যালঘু।
সুতরাং সর্বশেষ আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বেকডোর দিয়ে সমঝোতা করবেন, এই প্রশস্ত বুকের উপর দিয়ে বুলেট যেতে হবে। আর কোন বাংলাদেশে সমঝোতার রাজনীতি নয়।
গণজমায়েতে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি গোলাম মিয়া পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও বিভিন্ন সময় গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা।
‘মায়ের ডাকা’ নামের সংগঠনটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত। সংগঠনটির গণজমায়েতে যোগ দিতে দুপুরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন জুলাইয়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘ওয়ারিয়রস অব জুলাই’য়ের নেতাকর্মীরা।