টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে পণ্যেবাহি কার্গো বোট আটকে দিল আরাকান আর্মি!
শামসুল আলম শারেক, টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
দীর্ঘ এক মাস পর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফনদীর মোহনায় বাণিজ্যে পণ্যেবাহি দুটি কার্গো বোট আটকে দিয়েছে সেদেশের বিদ্রোহী শসস্ত্রগোষ্টী আরাকান আর্মি। এছাড়া আরেক পণ্যেবাহি কার্গো বোট সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌঙ্গরে রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আট পর্যন্ত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নাফনদীর মোহনায় সেদেশের জলসীমানায় নাক্ষ্যংকদিয়া নামক এলাকায় তল্লাশির নামে বোট দুটি আটকে রাখে। এর আগে দুপুরে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফনদীতে পণ্যেরবাহি বোটি দুটি আটকে দিয়েছিল।
এই তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফের স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোট লিমিটেড মহাব্যবস্থাপক জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে মিয়ানমারের থেকে পণ্যেবাহি তিনটি বড় কার্গো টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু নাফনদীর মাঝপথে তল্লাশি কথা বলে আটকে দেয়। এখন পর্যন্ত কোন খবর পাওয়া যায়নি। আগামী কাল সকালে (শুক্রবার) সকালে ছেড়ে দিতে পারে।’
এদিকে মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গত ৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপ আরাকান আর্মির দখলে নেয়। এরপর থেকে কোনো পণ্যেবাহী জাহাজ বন্দরে আসেনি। সর্বশেষ মিয়ানমার থেকে ৩ ডিসেম্বর টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহী জাহাজ এসেছিল।
স্থলবন্দর ও কয়েকজন ব্যবসায়ীর তথ্য মতে, ‘দীর্ঘ এক মাস পর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে বাণিজ্যের পণ্যেবাহি তিনটি কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টার দিকে নাফনদীর মোহনায় সেদেশের জলসীমানায় নাক্ষ্যংকদিয়া নামক এলাকায় তল্লাশির নামে দুটি আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এই খবরের পর অন্য কার্গো বোটটি সেন্টমার্টিন দ্বীপে নৌঙ্গর করে। তবে আরাকান আর্মি তল্লাশি করা বড় দুটি কার্গো বোটে ৩০ হাজারের বেশি বস্তা মালামাল রয়েছে। এর মধ্য আচার, শুঁটকি, সুপারী, কপিসহ বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। এসব শওকত আলী, ওফর ফারুক, মো.আয়াছ, এম এ হাসেম, মো. ওমর ওয়াহিদসহ অনেকে মালামাল রয়েছে খবর।
স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টউিনশিপ আরাকান আর্মির দখলের নেওয়ার পর থেকে স্থলবন্দরের পণ্যেবাহি ট্রলার আসা বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ গত ১৬ জানুয়ারী মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফনদীর মোহনায় পণ্যেবাহি কার্গো বোটগুলো তল্লাশি নামে আটকে রেখেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক মাস পর মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে আমিসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর মালামাল স্থলবন্দরে আসার পথে আটকে দেয় আরাকান আর্মি। এখনো পণ্যেবাহি বোট দুটি তাদের (আরাকান আর্মির) হেফাজতে রয়েছে। সেখানে ৩০ হাজার বস্তা আচার, শুঁটকি, সুপারীসহ বিভিন্ন মালামাল রয়েছে। এমনি কয়েক মাস ধরে স্থল বন্দরের ব্যবসা ধ্বসে পরেছে। এতে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারের উচিত সীমান্ত বাণিজ্যে সচল করতে মিয়ানমারের সাথে কথা বলে এটি সমাধানের পথ বের করা। না হলে ব্যবসায়ীরা টেকনাফ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।’
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারন সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে তিনটি পণ্যেবাহি কার্গো বোট টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু নাফনদীর মাঝপথে কার্গো বোটগুলো তল্লাশি চালানোর কথা শুনেছি। এরপর বোটগুলো কোন খবর পায়নি।’
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ২ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে মিয়ানমার জলসীমানায় পণ্যেবাহি কার্গো বোটে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে এ বিষয়ে কেউ অবহিত করেনি। তাছাড়া এটি আমাদের জলসীমানার বাইরে।’
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘টেকনাফ স্থলবন্দরে আসার পথে নাফনদী মোহনায় পণ্যেবাহি কার্গো বোট আটকে দেয় বলে শুনেছি। তবে সেটি তাদের জলসীমানায় বলে জানিয়েছে।’###