
পাঁচ সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ টেকনাফে দুর্বৃত্তের অত্যাচারে ঘরছাড়া প্রবাসীর পরিবার
শামসুল আলম শারেক, টেকনাফ ( কক্সবাজার)
কক্সবাজারের টেকনাফে স্থানীয় একটি বিরোধ ও হামলার ঘটনায় গত ছয়মাস ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র ফেরারি দিন কাটাচ্ছে কাতার প্রবাসী জাকের আহমদের পরিবারের। এতে তার স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ুয়া পাঁচ সন্তানেরও লেখাপড়া বন্ধ রয়েছে। অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে সন্তানদের শিক্ষাজীবন। প্রবাসী জাকের উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবনিয়া এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রী নাজমা কাওসারের বলেন, স্থানীয় ছিদ্দিক আহমদ ও তার ছেলের হামলা, অপহরণ এবং পরবর্তীতে হুমকি ধমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে । গত ছয় মাস ধরে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
প্রবাসী জাকের আহমদের স্ত্রী নাজমা কাওসার জানান, আমার স্বামী এবং ছিদ্দিক আহমদ আপন ভাই। কিন্তু স্বামী বিদেশ থাকায় ফরিদ আহমদ নিয়মিত আমার কাছে টাকা দাবি করতেন এবং টাকা না দিলে আমার পরিবারে উপর হামলা করবে বলে নিয়মিত হুমকি দিতেন। এ প্রেক্ষিতে ছিদ্দিকের নেতৃত্বে সাত আটজনের একটি সন্ত্রাসী দল গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভোররাতে আমার বাড়িতে হামলা করে। ওইদিন তারা দা কিরিচ দিয়ে আমাকে এবং আমার বয়োবৃদ্ধ শ্বশুর নুর আহমদ (৭০) কে কুপিয়ে আঘাত করে। বাড়িতে স্বর্ণালংকার লুট করার এক পর্যায়ে তারা আমার সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে সুরাইয়া জান্নাতকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমি থানায় অভিযোগ করি এবং প্রশাসনের সহায়তায় সন্ধ্যার দিকে মেয়েকে উদ্ধার করি।
নাজমা কাওসার আরো বলেন, আমার বাড়িতে হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিল ছিদ্দিক আহমদ ও তার ছেলে রাসেলসহ আট/দশ জনের একটি সন্ত্রাসী দল। এ বিষয়ে আমি গত ১৫ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করি। এরপর থেকে তারা আমাকে লাগাতার হুমকি ধমকি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি আমার পরিবারকে নিয়ে এলাকার বাইরে অবস্থান করছি। বর্তমানে আমি এলাকায় থাকতে না পারায় আমার দুই ছেলে ও তিন মেয়ের লেখাপড়া বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা কাওসার মামলার পর প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের উপর্যুপরি হুমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে গত ৮ ডিসেম্বর নিজের ও পরিবারের সদস্যদের সম্ভাব্য নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। শুধু তিনি নন, প্রবাসীর কন্যা স্কুল ছাত্রী সুরাইয়াকে উদ্ধারে সহায়তা করায় অভিযুক্তরা তার স্কুলের প্রাক্তন সভাপতি সাইফুল কাদেরকেও হুমকি দেয়। ছিদ্দিক আহমদ ও তার সহযোগীদের হুমকির অভিযোগ এনে তিনিও থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। শুধু তাই নয়, ছিদ্দিক আহমদের অনুসারীরা স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুস সালামকে হুমকি দেওয়ার একারণে যে, হামলার দিন তিনি প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দিতে সহায়তা করেছেন। এমন হুমকিতে আতঙ্কিত হয়ে তিনিও একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
প্রবাসী জাকের আহমদ জানান, ছিদ্দিক আহমদ আমার ভাই হলেও তিনি অর্থের লোভে পড়ে দিনদিন ত্রাসে পরিণত হয়েছে। গত বছর তারা সাত আটজনের একটি দল আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার স্ত্রী সন্তানকে কুপিয়ে আঘাত করে এবং আমার এক শিশু কন্যাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আমার পরিবার আইনের আশ্রয় নিলে তারা আমার পরিবারের সদস্যদের উপর আরও বেশি ক্ষেপে যায় এবং হুমকি ধমকি অব্যাহত রাখে। এতে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বিষয়টি অবহিত এবং সন্ত্রাসীদের থেকে পরিত্রাণ চেয়ে আমি কাতার দোহা বাংলাদেশ কাউন্সিল উইং এর মোবাশ্বেরা কাদের এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেছি। ঘটনার ছয়মাসেও আসামীরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে আমার ছেলে মেয়েরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং স্কুল মাদ্রাসায় যেতে পারছেন না।
প্রবাসীর স্ত্রী নাজমা কাওসার আরও জানিয়েছেন, আমরা স্থানীয় প্রতিবেশী ও লোকজনের মাধ্যমে গোপনে জানতে পেরেছি, সন্ত্রাসী ছিদ্দিক আহমদ নাকি আমরা বাড়িতে না থাকার সুযোগে আমাদেরকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানোর জন্য ঘরে অস্ত্র লুকিয়ে রাখার পরিকল্পনা করেছে। এছাড়া আমার পরিবারকে উলটো অপহরণকারী সাজাতে ছিদ্দিকের পুত্র রাসেলের অপহরণ চক্রের সদস্য রোহিঙ্গা জুহেল কে ভিকটিমের অভিনয় করিয়ে একটি অপহরণ নাটক সাজায় এবং প্রচার করে।
এ বিষয়ে বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শোভন কুমার সাহা, প্রবাসীর স্ত্রীর করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় দুইজন আটক আছে, ভিকটিম উদ্ধার আছে। রাসেল এলাকায় নেই, তাকে আমরা পেলে ধরবো। খুব শিগগির এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে। এছাড়া প্রবাসীর পরিবার নিজের বসত বাড়িতে অবস্থান করতে চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
প্রবাসীর স্ত্রীর করা মামলায় আটকের পর জামিনে রয়েছেন ছিদ্দিক আহমদ। তিনি তার প্রবাসী ভাইয়ের মেয়েকে তার ছেলে কর্তৃক অপহরণের কথা অকপটে শিকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন, আমার ছেলে ঘটনা করার পর আমি ছেলেকে বলে এবং নিজে চেষ্টা করে আমার ভাতিজিকে উদ্ধার করি। এসময় আমাকে পুলিশ দিয়ে আটক করানো হয় এবং পরবর্তীতে মামলায় আসামি করা হয়। ঘটনার পর আমি অনেকভাবে স্থানীয়ভাবে চেষ্টা করেছি বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য। কিন্তু বিষয়টি এ পর্যন্ত মীমাংসায় যাচ্ছেনা। প্রবাসী ভাইয়ের পরিবারকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।###