২৬শে মে, ২০২৫, ২৭শে জিলকদ, ১৪৪৬
সর্বশেষ
টেকনাফে সেবা প্রার্থী মহিলাদের প্রকাশ্যে ইউপি সচিবের মারধর: বহিস্কারের দাবী স্থানীয়দের
আওয়ামী লীগের কৃষক লীগ নেতা গ্রেপ্তার
মায়ানমার পাচারকালে বিপুল পরিমাণ সিমেন্টসহ ৫ পাচারকারী আটক
টেকনাফে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে   দেশী বিদেশি ৬ টি অস্ত্র,২ টি ম্যাগাজিনসহ ৯৭৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার
যাদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব
বিএনপির জন্ম না হলে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন হত না: সালাহউদ্দিন আহমদ
টেকনাফে অস্ত্র ইয়াবাসহ আটক ৩
এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিলেন বিএনপি হাসনাত আব্দুল্লাহকে
কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাচনে ভোট গ্রহণের উপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের সমুদ্র উপকূলও তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের গৌরবগাঁথা সাফল্য
চকরিয়ায় একাধিক মামলার আসামি যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার
নেপালকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় রয়েছে বৈষম্যহীন সমাজের রূপরেখা: অধ্যক্ষ মাওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির টেকনাফ উপজেলা সাবরাং ইউনিয়নের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা”২৫ অনুষ্ঠিত
সাবেক মন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

টেকনাফের মাদক,মানবপাচার ও অপহরণ চক্রের দুই সদস্য র‍্যাবের হাতে আটক: জনমনে স্বস্তি

টেকনাফের মাদক,মানবপাচার ও অপহরণ চক্রের দুই সদস্য র‍্যাবের হাতে আটক: জনমনে স্বস্তি

শামসুল আলম শারেক, টেকনাফ ( কক্সবাজার)।

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশ বনিয়া গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ত্রাস সৃষ্টি করে আসা চিহ্নিত সন্ত্রাসী রাসেল ও তার বড় ভাই আতিক উল্লাহ অবশেষে র‌্যাবের জালে আটক হয়েছে। ১৬ মে আনুমানিক ২টার দিকে র‌্যাবের একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি পাহাড়ি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
গ্রেফতারকৃত রাসেল বিএনপির বাহারছড়া ইউনিয়ন দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ছিদ্দিক আহমদ ওরফে কসাই ছিদ্দিকের ছেলে। কসাই ছিদ্দিক নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি ও জুলুমের মাধ্যমে চুপ করিয়ে রেখে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ছেলেদের দিয়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন একটি অপরাধ সাম্রাজ্য, যার শাখা বিস্তৃত মাদক, মানব পাচার, অপহরণ, চোরাচালান, গরু চুরি, জমি দখল, অস্ত্রের মহড়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দখলবাজি পর্যন্ত।
গরু চুরি ও নিরপরাধদের ফাঁসানো
সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্দিকের পরিবার এবং তাদের সহযোগীরা মাড়িসবু গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে জামাল উদ্দিন এবং নুর কামাল ও মৌলভী গফুরের একটি গরু চুরি করে। চুরির ঘটনার পর গরুটি ধরা পড়লেও, তারা নিজেদের বাঁচাতে নিরপরাধ কয়েকজনকে জড়িয়ে দেয়। ওই নিরীহ ব্যক্তিরা বর্তমানে জেল হাজতে বন্দি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় সৃষ্টি হয় উত্তেজনা ও সংঘর্ষ, যেখানে তিনজন আহত হন এবং একজন এখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
ইয়াবা ব্যবসা ও তরুণদের বিপথগামী করা
সিদ্দিকের পরিবার এলাকার যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে। তাদের পরিচালিত ইয়াবা কারবারে এলাকার দুইজন কলেজপড়ুয়া ছাত্রসহ মোট সাতজন সাধারণ যুবককে ব্যবহার করে তৈরি করেছে ইয়াবা কারবারি। জনমনে প্রশ্ন— কোনো পেশা বা বৈধ আয় না থাকা সত্ত্বেও রাসেল কীভাবে লাখ টাকার বাইক (R15) চালান? কীভাবে তাদের পরিবার বিলাসবহুল বাড়ির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যার ফাউন্ডেশন ও স্ট্রাকচার ইতোমধ্যে দাঁড়িয়ে গেছে?
দলীয় প্রভাব ও ‘একক আধিপত্য’
ছিদ্দিক আহমদ ওরফে কসাই ছিদ্দিক রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় নিজের মত করে ‘বিচার-সালিশ’, দখল বাণিজ্য ও সিন্ডিকেট চালাচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার অনুমতি ছাড়া এলাকার কোনো সামাজিক সিদ্ধান্ত বা সালিশি কার্যক্রমও হয় না। মতের অমিল হলেই মানুষকে অস্ত্র ও দা দেখিয়ে হুমকি দেওয়া তার নিত্যদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
পারিবারিক দ্বন্দ্বেও অপরাধ
এমনকি নিজের আপন ছোট ভাই প্রবাসী জাকের আহমদের বাড়িতেও ডাকাতি করে লুটপাট চালিয়েছে এই পরিবার। থানায় অভিযোগ জানানো হলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরাও চাক্ষুষভাবে বিষয়টি দেখেছেন।
পূর্বের অপরাধসমূহ
এর আগেও রাসেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, অপহরণ, মানব পাচার (বিশেষ করে মালয়েশিয়ায়), মাদক ব্যবসা (প্রকাশ্যে ‘মাদক সম্রাট’ নামে পরিচিত), মিয়ানমার থেকে পণ্য চোরাচালান, গরু চুরি ও একাধিক মামলার অভিযোগ রয়েছে। তাকে এবং তার ভাইকে বিএনপির প্রভাব কাজে লাগিয়ে আইনের বাইরে রাখার চেষ্টা বহুবার হয়েছে।
এলাকাবাসীর উদ্বেগ ও আহ্বান
এই চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তারের খবরে এলাকার প্রায় হাজার খানেক মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। কিন্তু তারা আশঙ্কা করছেন, বিএনপির একাধিক প্রভাবশালী মহল তাদের মুক্ত করতে তদবির চালাচ্ছে। স্থানীয় এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “ওরা ছাড়া পেলে আবারও এলাকায় আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আমরা অনুরোধ করছি, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।”
প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত চলছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।###

শেয়ার করুনঃ