টেকনাফে সেবা প্রার্থী মহিলাদের প্রকাশ্যে ইউপি সচিবের মারধর: বহিস্কারের দাবী স্থানীয়দের
শামসুল আলম শারেক , টেকনাফ (কক্সবাজার)।
কক্সবাজার সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নুরুল হুদার বিরুদ্ধে হেনস্তা, মারধর ও ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ইউনিয়নের হতদরিদ্র নারীরা ৩০ কেজি (ভিডাব্লিউবি) চালের জন্য গেলে সচিব নুরুল হুদা হতদরিদ্র মহিলাদের শরীরে হাত দেন এবং মারধরসহ অমানবিক আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে গুরুতর আহত হয় এক মহিলা। শনিবার (২৪ মে) সকালে উপজেলার হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ সংক্রান্ত ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়,হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নুরুল হুদা হতদরিদ্র নারীদের লাইনে গিয়ে শরীরে হাত দিয়ে ধাক্কাধাক্কি করতেছে এবং মহিলার শরীরের বিভিন্ন অংশ হাতে স্পর্শ করার দৃশ্য দেখা যায়। এদৃশ্য সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে।ফুঁসে উঠেছেন স্থানীয়রা এবং তাকে দ্রুত বহিষ্কারের দাবি জানান। দ্রুত বহিষ্কার করা না হলে যেকোনো সময় ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
শহিল্লাহ নামে এক যুবক ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে ফেসবুকে লিখেন,"আমি ৩ বছর আগেই বলেছিলাম লোকটা ভালো না!হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নুরুল হুদা
মা-বোনদের মারার দুঃসাহস কই পাই? অতিদ্রুত তাকে বহিষ্কার ও শাস্তি দেওয়া হউক। শাহাব উদ্দিন একজন লিখেন,
১নং হোয়াইক্যং মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের আচণ দেখুন, এলাকার মা-বোনদের উপর কিভাবে নির্যাতন করতেছে, লাঠিচার্জ, খিল ঘুসি মারতেছে, তারপরও চেয়ারম্যান মহোদয় নীরব কেন? হোয়াইক্যং ইউনিয়নের মানুষ কার কাছে বিচার চাইবে, মহিলাদের কে হাত তোলার অধিকার কে দিছে,এইরকম অমানবিক নির্যাতনের সুস্থ বিচার চাই, উপজেলা প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেছি। হাসিন তাজওয়ার নামে আরেক যুবক লিখেন,এত সাহস কিভাবে হয় তোদের,, মেয়েদের গায়ে হাত তোলা একদম অমানবিক আচরণ।বিষয়টা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হোক।
ভুক্তভোগী নারীদের দাবি, চালের জন্য গেলে সচিব প্রথমে তাদের কটূক্তি করেন এবং পরে একপর্যায়ে শারীরিকভাবে আঘাত করেন ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালান। একজন সরকারি চাকরীজিবী এমন বর্বর আচরণ করতে পারেন কিনা -এমনি প্রশ্ন সচেতন মহলের। ওই সময় সচিব নারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন, যা একজন সরকারি কর্মকর্তার পেশাগত দায়িত্ব ও নৈতিকতার গুরতর লঙ্ঘন বলে দাবি করেন সচেতন মহল।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সচিবের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও অনৈতিকতার অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তারা বলছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নুরুল হুদা দীর্ঘদিন ধরেই অসহায় মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহার করে চলেছেন। ভিজিএফ,ভিডাব্লিউবি,( ভিজিডি) বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সকল ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পেতে হলে সচিবের খপ্পরে পড়তে হয় বলে দাবি করছেন ইউনিয়নের বেশ কিছু বাসিন্দা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব নুরুল হুদা কোনো সদুত্তর না দিয়ে উল্টো তাকে মেরেছে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
গেল কয়েক বছর আগেও সচিব নুরুল হুদার বিরুদ্ধে সেবাপ্রার্থী নারীদের কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। যেসবের স্ত্রিনশর্টও ওই সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তুমুল সমালোচনার সম্মুখিন হয় নুরুল হুদা। সেসময়ও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।
এমন ঘটনায় স্থানীয়দের প্রশ্ন—জনগণের সেবা দেওয়ার কথা যাদের, তারা যদি নিজেই নিপীড়ক হয়ে ওঠে, তাহলে সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা কে করবে? সচিবের মতো দায়িত্বশীল পদে থেকে যদি কেউ অসহায় নারীর সঙ্গে এমন আচরণ করে, তবে তা শুধু ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং পুরো প্রশাসনের প্রতি আস্থার বড়সড় আঘাত। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়ে সেই আস্থা পুনরুদ্ধারে কতটা আন্তরিক হয়!
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদে চাকরির সুবাদে সচিব নুরুল হুদা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় এক দালাল বাহিনী।
জন্মনিবন্ধন থেকে শুরু করে টেন্ডারের কাজ পর্যন্ত সবকিছু দালালের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে দু'হাতে টাকা কামাচ্ছেন বলে অভিযোগ নুরুল হুদার বিরুদ্ধে। টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় দালালের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ করিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমনি কিছু ডকুমেন্টস প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ইউনিয়ন পরিষদের পুকুর সংস্কারের নামে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যে মাটি বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। এক জায়গায় দীর্ধদিন চাকরির সুযোগ রাজনৈতিক বলয় তৈরি ও দালাল বাহিনী গড়ে পুরো ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে। দ্রুত তাকে পরিষদ থেকে সরিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান এবং তার অবৈধ সম্পদ জব্দে দুদকের জোর হস্তক্ষেপ কামনা স্থানীয় সচেতন মহল।
জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা (এসিল্যান্ড) রাকিব হাসান চৌধুরী বলেন,এসব বিষয়গুলো ইউএনও স্যার দেখে,স্যার আসলে আমি বিষয়টি উনাকে অবগত করবো।###